,

সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা; বিচার শেষ হয়নি ১৮ বছরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি শেষ হয়নি বিচার কার্যক্রম। সাক্ষী হাজির করতে না পারাসহ অন্যান্য জটিলতায় সৃষ্টি হয় এমন পরিস্থিতি।

হামলার ঘটনার পরপরই সারা দেশে ১৫৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন ৬৫টি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। উল্লেখ্য, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ ছাড়া বাকি ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায়।

এই সিরিজ বোমা হামলার রায় দেওয়া মামলাগুলোর ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮ জনের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। ঢাকার ১৮টি মামলার মধ্যে ১৩টির রায় ঘোষণা করা হলেও এখনো বিচারাধীন ৫টি।

উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানা গেছে, হাইকোর্টে জঙ্গিদের করা বেশ কিছু ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হয়েছে। অনেক আসামির জামিনের আবেদন এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। তবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সচেষ্ট রয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গি ও নাশকতাসংক্রান্ত মামলাগুলো রাষ্ট্রপক্ষ সব সময় মনিটর করে থাকে। বিচারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা এবং আসামিদের নাম-পরিচয়সহ নানা তথ্য-প্রমাণের অভাবে এতদিনেও বিচারকাজ শেষ করা যায়নি। এ ছাড়া করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় মামলার কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে ছিল। তবে বর্তমানে পুরোপুরি আদালতের কার্যক্রম চলায় সাক্ষীদের হাজিরসহ অন্যান্য জটিলতা নিরসন করে দ্রুত সময়ে বিচারকাজ শেষ করা হবে বলে জানানো হয়। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার ডিসি অফিস, জজ কোর্ট ও পায়রা বন্দরে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন আসামিরা। পরে উচ্চ আদালত ২১ জনের মধ্যে ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন। এ ছাড়া বাকি ৭ জনকে খালাস দেন আদালত। আদালতের রায়ের পর সাজাপ্রাপ্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২২ জুন রাজধানীর তেজগাঁও থেকে বাকি পলাতক দুই আসামির মধ্যে জেএমবি সদস্য তুহিন রেজাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার হওয়া এই ১৩ আসামি এখন কারাগারে রয়েছেন।

এছড়া ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর খিলক্ষেত ওভারব্রিজের কাছে রাজউক মার্কেটের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় খিলক্ষেত থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কাওসার আলম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যকে ১২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর দুই নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আল মামুন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আবদুল্লাহ আল সুহাইল, হাবিবুর রহমান, মো. মুসা ওরফে মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে সামাদ ওরফে মিন্টু, মো. আবদুর রহমান ও মো. নূরুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে জুবায়ের। এদের মধ্যে হাবিবুর ও মুসা এখনো পলাতক।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এই আদালতে ৫টি মামলার মধ্যে দুটির রায় হয়েছে। তিনটি মামলা এখনো বিচারাধীন। সেগুলোও সাক্ষ্য নেওয়া পর্যায়ে রয়েছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেওয়া যায় না। তারপরও সাক্ষ্য যা হয়েছে বা আরও কয়েকটা সাক্ষ্য নেওয়া শেষ করে এ বছরের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

 

এই বিভাগের আরও খবর